Sunday, February 24, 2013

সিলেটসহ সারা দেশে ৩৭ মামলায় আসামি ৫৪ হাজার.......


ইসলাম অবমাননার বিরুদ্ধে শুক্রবার মুসল্লিদের বিক্ষোভের ঘটনায় শীর্ষ ধর্মীয় নেতা, দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকসহ প্রায় ৫৩ হাজার ৭০০ জনকে আসামি করে সারা দেশে৩৭টি মামলা করেছে পুলিশ। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২৮৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ঢাকায় ৯২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
মামলার আসামি ধর্মীয় নেতাদেরমধ্যে রয়েছেন- জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ নেজামী, খেলাফত আন্দোলনের আমীরে শরীয়ত মাওলানা শাহ্ আহমদুল্লাহ আশরাফ, খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব সাবেক মন্ত্রী মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস ও সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আজাদ।
এছাড়াও আছেন দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আবদুল জব্বার।
রিমান্ড
হেফাজতে পাঠানোদের মধ্যে পল্টন থানায় গ্রেপ্তার ৩৩ জন, রমনা থানার ১৫ জন, মতিঝিল থানার ১০ জন, শাহবাগ থানার ১০ জন, ধানমন্ডি থানার তিনজন, উত্তরা (পশ্চিম) থানার ছয়জন ওউত্তরা (পূর্ব) থানার সাতজন, শাহ আলী থানার পাঁচজন ও হাজারীবাগ থানায় গ্রেপ্তার তিনজন রয়েছেন।
ঢাকা
ঢাকায় ইসলামী ও সমমনা ১২ দল এবং ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের নামে পৃথক ১৫টি মামলা করেছে পুলিশ। অন্যদিকে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৫টি।
মামলাগুলোর মধ্যে পল্টন ও শাহবাগ থানায় চারটি করে এবং রমনা, শেরেবাংলা ও ওয়ারিতে একটি করে মামলা দায়ের করা হয়।শুক্রবার রাতে রাজধানীর সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ কর্মকর্তারা এক হাজারেরও বেশি লোককে আসামি করে এসব মামলা দায়ের করেন।
এছাড়াও সাংবাদিক ও পুলিশের উপর হামলা, পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার করেআতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগে পল্টনথানায় তিনটি ও দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
চারটি মামলার প্রত্যেকটিতে ৫৮ জনের নাম উল্লেখ করে চার হাজার নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। শুক্রবার মধ্যরাতথেকে শনিবার ভোররাত পর্যন্ত এ মামলা চারটি দায়ের করে পুলিশ।
অন্যদিকে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে শাহবাগ ও পল্টন থানায় পাঁচটি মামলা দায়ের করা হয়।
এসব মামলায় জামায়াতে ইসলামীরভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, নায়েবে আমির হামিদুর রহমান আজাদ এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আবদুল জব্বারসহ ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় পাঁচ হাজার লোককে আসামি করা হয়।
ঢাকায় দায়ের করা মামলাগুলোতেগ্রেপ্তার দেখানো ব্যক্তিদের মধ্যে পল্টন থানায় গ্রেপ্তার ৩৩ জন, রমনা থানার ১৫ জন, মতিঝিল থানার ১০ জন, শাহবাগ থানার ১০ জন, ধানমন্ডি থানার তিনজন, উত্তরা (পশ্চিম) থানার ছয়জন ওউত্তরা (পূর্ব) থানার সাতজন, শাহআলী থানার পাঁচজন ও হাজারীবাগ থানায় গ্রেপ্তার তিনজনকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
চট্টগ্রাম
গণজাগরণ মঞ্চ ও প্রেসক্লাবে হামলা-অগ্নিসংযোগ এবং পুলিশ ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার অভিযোগে শুক্রবার রাতে সাড়ে তিন হাজার ব্যক্তিকে আসামি করে চট্টগ্রামে দুটি মামলা হয়েছে।
উপপরিদর্শক (এসআই) বেলাল উদ্দিন শুক্রবার রাতে সন্ত্রাস দমন আইন ও দ্রুতবিচার আইনে কোতোয়ালি থানায় ওই দুই মামলা করেন।
এ সব মামলায় শিবিরের মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি মশরুর হোসাইনসহ ২১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও অনেককে আসামি করে সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা হয়েছে।
দ্রুতবিচার আইনে করা মামলায় শিবিরনেতা মশরুরসহ ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় সাড়ে তিন হাজারব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
সিলেট
শহীদ মিনারে হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগে সিলেটে সাড়ে পাঁচ হাজার জনের দুটি মামলা হয়েছে। শনিবার দুপুরে সিলেট কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক জামাল উদ্দিন ও কমর উদ্দিন বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন।
শহীদ মিনারে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে একটি এবং পুলিশের ওপর হামলা ও গুলি ছোড়ার অভিযোগে আরেকটি মামলাহয়েছে। ৭০ জনের নাম উল্লেখসহ দুই মামলায় মোট সাড়ে পাঁচ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। দুই মামলায় এখন পর্যন্ত ৫৬ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
রাজশাহী
রাজশাহীতে গণজাগরণ মঞ্চ ভাঙচুরসহ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় ইসলামী ও সমমনা ১২ দলসহ জামায়াত-শিবিরের সাড়ে পাঁচ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়।
শুক্রবার রাতেই মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানা ও রাজপাড়া থানায় মামলা দুটি দায়ের করা হয়।
শুক্রবার সংঘর্ষ চলাকালে আটক২৬ জনের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে এ দুটি মামলায় ১৮ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার দুপরে তাদের আদালতে চালান দেয়া হয়।
খুলনা
ইসলাম অবমাননা বিরোধী শুক্রবারের মিছিলকে কেন্দ্র করে ওইদিন রাতেই খুলনায় সাড়ে সাত হাজার মুসল্লির বিরুদ্ধেমামলা করা হয়।
সদর থানায় ২৪ জনের নাম উল্লেখসহ ৪/৫ হাজার এবং সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় ২০ জনের নাম উল্লেখসহ দুই হাজার থেকে ২৫শ’ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা দুটি করা হয়।
সোনাডাঙ্গা মডেল থানার মামলায় আব্দুল্লাহ আল মামুন, দিদারুল হক তামিম, ওসমান গনি, নাজমুল হাসান, সাইফুল ইসলাম, কওসার আলী, রিয়াজউদ্দিনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়।
বগুড়া
প্রজন্ম মঞ্চ ভাঙচুরের ঘটনায়বগুড়া সদর থানায় উপ-পরিদর্শকআব্দুর রাজ্জাক বাদী হয়ে ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করে ১৫ হাজারলোকের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
বগুড়া সদর থানার ওসি (তদন্ত) রিয়াজ উদ্দীন জানান, একদল উচ্ছৃঙ্খল মুসল্লি সাতমাথায় প্রজন্ম মঞ্চের উপর হামলা করে ভাঙচুর করে এবং পুলিশ বাধা দিলে তাদের উপরও হামলা চালায়।
এ ঘটনার পরপরই পুলিশ সাতমাথা ও থানা রোডে অভিযান চালিয়ে ১৬জনকে আটক করে। এরপর রাতে শহরের বিভিন্নানে অভিযান চালিয়ে আরো ৪জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গাইবান্ধা
জেলার পলাশবাড়ী থানায় জামায়াতের আমিরসহ সাড়ে ৪ হাজার নেতা-কর্মী বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনসহ তিনটি পৃথক মামলা হয়েছে। দায়ের করা মামলায় এ পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
হবিগঞ্জ
জেলার শায়েস্তাগঞ্জ সদর উপজেলায় মহানবীকে (সা.) অবমাননাকারী ব্লগারদের ফাঁসির বিক্ষোভ করায় বিএনপি-জামায়াতের ২৫শ’ নেতা-কর্মীর নামে ৩টি মামলা হয়েছে।
এসব মামলায় শায়েস্তাগঞ্জ থানা জামায়াত সেক্রেটারি ইয়াছির খাঁ (২৭), ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি শামসুল আলম ইকবাল (৩২), পৌর যুবসংহতি নেতা তাজুল ইসলাম তাজু (৩৫) ও পৌর যুবদল সহ-সভাপতি আবুল ফজলকে (৩০) আটক করেছে পুলিশ।
চাঁদপুর
১২ শতাধিক লোকের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে চাঁদপুরে। শুক্রবার রাতে চাঁদপুর সদর মডেল থানার এসআই মাহবুবুর রহমান মোল্লা মামলা দুটি করেন।
এসব মামলায় শুক্রবার রাতভর অভিযান চালিয়ে সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান গাজীসহ ৪২ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
জয়পুরহাট
শুক্রবার জনতার মঞ্চে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও আওয়ামী লীগের ব্যানার ছেঁড়ার ঘটনায় ইসলামী ও সমমনা দলসহ জামায়াত-শিবিরের দুই হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে সদর থানার এসআই হাসমত আলী বাদী হয়ে করা এ মামলায় ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
জয়পুরহাট সদর থানার ওসি আব্দুর রশিদ বলেন, জুমার নামাজের পর জামাত-শিবিরসহ ইসলামী দলগুলো মিছিল সহকারে জনতার মঞ্চে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং শহরের রাস্তায় টাঙ্গানো আওয়ামী লীগের ব্যানার ফেস্টুন ভাঙচুর করে, ছিঁড়ে ফেলে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
গাজীপুর
শুক্রবার গণজাগরণ মঞ্চে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করার অভিযোগে গাজীপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মনির হোসেনকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় দেড় হাজার লোকের বিরুদ্ধে মামলা করেন গণজাগরণমঞ্চের উদ্যোক্তা জুলিয়াস চৌধুরী।
এ মামলায় গাজীপুর বিজনেস ম্যানেজমেন্ট (বিএম) কলেজের শিক্ষক আসাদুজ্জামান আকাশকে (৩৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জয়দেবপুর থানার উপ-পরিদর্শক মিঠু শেখ জানান, ফেসবুকে বিভিন্ন সময়ে উস্কানিমূলক ও উগ্র সম্প্রদায়িক বক্তব্য লেখা ও তা শেয়ার করার অভিযোগেআকাশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

No comments:

Post a Comment