Saturday, February 23, 2013

অমর ২১ আজ.......

আজ ২১ ফেব্রুয়ারি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ দিবস শোকের, গর্বের, অহংকারের। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি যে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাঙালি রক্ত দিয়েমাতৃভাষাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছিল, আজ তা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ইতিহাস বলে, ১৯৪৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে ভাষা-বিক্ষোভ শুরু হয়। ১৯৪৮ সালের মার্চে এ নিয়ে সীমিত পর্যায়ে আন্দোলন হয় এবং ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি তার চরমপ্রকাশ ঘটে।ঐদিন সকালে ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” দাবিতে স্লোগান দিয়ে রাজপথে বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালামসহ কয়েকজন তরুণ শহীদ হন।এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ জনতা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের সামনে সমবেত হয়। ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ জানাতে পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি পুণরায় রাজপথে নেমে আসে। তারা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহীদদের জন্য অনুষ্ঠিত গায়েবি জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। ভাষাশহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি এক রাতের মধ্যে মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে গড়ে তোলেন একটি স্মৃতিস্তম্ভ, যা ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালিন সরকারগুঁড়িয়ে দেয়। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়। এরপর ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করলে ৯ মে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষাহিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয় আমাদের বাংলা ভাষা। আর বহু সংগ্রাম ও ত্যাগ-তিতিক্ষায় পূর্ব-পাকিস্তানের মানুষ একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পাকিস্তানি শাসকদের পরাস্ত করেই স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জন করে।একুশের বিশাল ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের দ্বারা পাকিস্তানি শাসকদের পরাস্ত করা না গেলে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা খুবইকঠিন হতো। একুশে তাই আমাদের মূল ওভিত্তিমূল গড়ার মৌলিক এক বিজয়ের নাম। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষিত হয়। আর ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসঙ্ঘের সদস্যদেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। আজ একুশে ফেব্রুয়ারির এই দিনে আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি ভাষা আন্দোলনের শহীদদের। গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করছি ভাষাসৈনিকদের।

No comments:

Post a Comment